কিছু কথা এই প্রযুক্তি নিয়েঃ
দিন বদলাচ্ছে,সেই সাথে প্রযুক্তিও বদলাচ্ছে তার কাজ করার ধরন। সম্প্রতি এমনি একটি হার্প (HAARP) প্রযুক্তির জানান দেন যুক্তরাষ্ট্র । এ প্রযুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য হলো আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে আয়নমলের সৌরবিদ্যুতের ওপর প্রভাব তৈরি করা। শুনতে অবাক লাগলেও,এ প্রযুক্তি দিয়ে কৃত্রিম ভাবে জলোচ্ছ্বাস এমনকি ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে । চলুন তাহলে এই হার্প (HAARP) প্রযুক্তি নিয়ে একটু যৌক্তিক আলোচনা করা যাক--
HAARP কি?
HAARP হল "উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাক্টিভ অরোরাল রিসার্চ প্রোগ্রাম", যা ছিল পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলের একটি অঞ্চল আয়নোস্ফিয়ার অধ্যয়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা একটি গবেষণা প্রোগ্রাম। আয়নোস্ফিয়ার হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৮ কিমি থেকে ৯৬৫ কিমিঃ পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমন্ডলীয় এলাকা। প্রোগ্রামটি মার্কিন সামরিক বাহিনী এবং বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল এবং এটি আলাস্কার গাকোনাতে অবস্থিত।
HAARP এর প্রতিষ্ঠাতা কে?
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর আর্থিক সহায়তায় আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিরক্ষা উন্নয়ন গবেষণা কর্মসূচী সংস্থা (ডিআরপিএ) হার্প প্রতিষ্ঠা করে ,গবেষণা চালাচ্ছে ১৯৯৩ সাল থেকে। এ কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য হলো আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে আয়নমলের সৌরবিদ্যুতের ওপর প্রভাব তৈরি করা।
HAARP কিভাবে এবং কি কি কাজ করতে পারে?
HAARP এর মূল কাজ হল রেডিও উপগ্রহ থেকে পাঠানো সংকেতগুলি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি তরঙ্গ ব্যবহার করে বৃহত উচ্চতা স্থান বা আকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে পাঠানো।
এছাড়াও HAARP এর অন্যান্য কাজ হল আকাশে বিভিন্ন প্রকারের শক্তিশালী তরঙ্গ পাঠানো যাতে ভূমির উপরে একটি বিশেষ প্রভাব পাওয়া যায়।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম হার্প টেকনোলজি কি। তো এবার আমাদের জানতে হবে যে, এই হার্প টেকনোলজি দিয়ে কি কি করা যায়। কেননা, আমি শুরুতেই আপনাকে একটা কথা বলেছি। সেটি হলো, এমন অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে। যেগুলো কৃত্রিম ভাবে হার্প টেকনোলজি এর সাহায্য সৃষ্টি করা সম্ভব।
তবে এই হার্প টেকনোলজি দিয়ে আরো অনেক ধরনের কাজ করা সম্ভব। যেমন,
হার্প টেকনোলজি দিয়ে পৃথিবীর মধ্যে যে চৌম্বক ক্ষেত্র আছে। সেই চৌম্বক ক্ষেত্র এর মধ্যে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
উক্ত টেকনোলজি দিয়ে প্লাজমা মেঘ তৈরি করা সম্ভব।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, হার্প টেকনোলজি দিয়ে মানব সৃষ্ট ভূমিকম্প সৃষ্টি করা যায়।
এই উন্নত টেকনোলজি দিয়ে মানবসৃষ্ট জলচ্ছাস সৃষ্টি করা যায়।
যে কোনো ধরনের মিসাইল কিংবা এয়ারক্রাফট কে ধ্বংস করা যায়।
তো এই হার্প টেকনোলজি দিয়ে মানুষ কি কি করতে পারবে। তার তালিকা গুলো আপনি উপরে দেখতে পাচ্ছেন। এবার আপনি একটু ভেবে দেখুন তো, এই হার্প টেকনোলজি মানুষের জন্য কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি বয়ে আনতে পারে।
তুরুস্কের ভূমিকম্পের জন্য কি HAARP দায়ী?
ডিম্বাকৃতির একটি জাহাজ যেখানেই যায়, সেখানেই ঘটে ভুমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটির ক্ষমতা আছে আবহাওয়া পরিবর্তন করে দেওয়ার। এর মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ঘটানো যায় বড়সড় মানবিক বিপর্যয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকদিন ধরেই ছড়িয়ে পরেছে এমন একটি খবর।
ছবি সম্বলিত পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “জাহাজটি আমেরিকান সংস্থা হার্প এর। এটি সুমদ্রের যে প্রান্তে যায়, সেখানেই ভূমিকম্প হয়। তুর্কির তীরে আসার পর, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প হয়েছে। তবে কি তুরস্কের ভূমিকম্পের পেছনে আসলেই যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে? এ নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা আমাদের মধ্যে থেকেই যায়,তাদের কি আসলেই হাত আছে নাকি এটি একটি শঙ্কা থেকে বলা হচ্ছে?
রয়টার্স এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, তুরস্কের ভূমিকম্পের উপর হার্পের কোনো হাত নেই। হার্প কোনো ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে না।তুরস্কে হার্পের উপস্থিতি ও আমেরিকাকে দায়ী করে, ভূমিকম্প ঘটানোর যোগসাজশ একেবারেই ভিত্তিহীন। বরং এটি আমেরিকার একটি বৈজ্ঞানিক প্রকল্প মাত্র। এর পিছনে মার্কিন সরকারের কোনো হাত নেই।
HAARP কি বর্তমান পৃথিবী এর জন্য হুমকি?
হ্যাঁ, এই সময়ে HAARP পৃথিবীর জন্য হুমকি না। এটি একটি গোপন ও উন্নয়নশীল গবেষণা প্রকল্প হিসাবে গড়ে তোলা হয় এবং এর উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন করার জন্য।
এছাড়াও সময়ের সাথে সাথে HAARP প্রযুক্তি পরিবর্তন হয়েছে এবং এখন এর ব্যবহার করা হয় ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগুলি উন্নয়নে এবং বিভিন্ন বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণার জন্য। এর অপব্যবহার হতে পারে তবে এটি বর্তমানে কোনও প্রকার হুমকি না। তবে বলাই যায় এই জটিল ও অত্যন্ত শক্তিশালী প্রযুক্তি কটু উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবহার নিঃসন্দেহে আমাদের আগামী দিনের জন্য ভয়াভহ হতে পারে ।
HAARP এর থেকে কি ভালো থাকা সম্ভব?
HAARP একটি উন্নয়নশীল ও গোপনীয় গবেষণা প্রকল্প হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে যা বিভিন্ন বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়।
HAARP দ্বারা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়, যেমন স্পেস কমিউনিকেশন, রেডিও ও টেলিভিশন সংযোগ, পৃথিবীর ভৌত পরিবেশ এবং মৌসুম পূর্বাভাস, জনসংযোগ ও দূরবর্তী প্রযুক্তি সম্পর্কিত গবেষণা। এর সাথে সাথে এটি বিভিন্ন উচ্চতার গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত হয়।
তবে সবার দৃষ্টি অগোচরে এই শক্তিশালী প্রযুক্তির অসাধু ব্যবহার নিঃসন্দেহে আমাদের হুমকি । তবে একটি প্রযুক্তির যেমন আছে ভালো দিক তার একটি খারাপ দিকটাও থাকে,তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে তা আমাদের জন্য হুমকি নয় বরং আমদের জন্য একটি আশীর্বাদ বলা যেতে পারে । এই প্রযুক্তি মানবসভ্যতার কাজে লাগাতে পারলে আমরা আগিয়ে যেতে পারবো আরও একধাপ ।
প্রিয় পাঠক,
এতক্ষণ ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ । আমার লেখা আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই জানাবেন । এরকম আরো কি কি বিষয় নিয়ে জানতে চান আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন,আমরা সহজভাবে উপস্থাপন করার চেস্টা করবো ।
আশা করি আমার এই লিখা থেকে আপনি একটু হলেও কিছু শিখতে পেরেছেন বলে আমি মনে করি !